প্রত্যয় নিউজডেস্ক: বেসরকারি ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর প্রায় এক বছর আগে ইন্টার্ন শেষ করেন সাইদুর রহমান। ইন্টার্ন শেষ করার পরই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (নিবন্ধন সনদ) নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কথা ভেবে ইচ্ছে থাকলেও নানা কারণে আর সনদ নিতে আসা হয়নি।
আগের তুলনায় করোনা-ভীতি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু হওয়ায় সাইদুর রহমান বিএমডিসিতে এসেছেন সনদ নিতে। কিন্তু এখানে এসে তার মতো আরও অনেক চিকিৎসকের ভিড় দেখে অবাক হন। জরুরি ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন তুলতে নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা দিয়ে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
বুধবার (২৬ আগস্ট) সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেসরকারি একটি হাসপাতালে চাকরির কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ইদানীং ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বিএমডিসি থেকে তুলে দ্রুত জমা দিতে বলেছেন। এ কারণেই সকালে এসে টাকা জমা দিয়ে বসে আছেন।’
বিএমডিসি ভবন সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সাইদুর রহমানের মতো আরও শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক রাজধানীর ২০৩, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির বিএমডিসি ভবনের দোতলায় রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউ সোফায় বসে, কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউবা টাকা জমা দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, দেশের যেকোনো সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার জন্য দেশ-বিদেশের অনুমোদিত মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস বা যেকোনো উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ডিগ্রি (যেমন-এফসিপিসি, এমডি, এমএস, এমফিল, এমপিএইচ, পিএইচডি) লাভের পর বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ চাকরি কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে রোগীর চিকিৎসা প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। করোনার কারণে গত কয়েক মাস বিএমডিসিতে হাতেগোনা খুবই অল্প কয়েকজন সনদ নিতে এলেও সম্প্রতি রেজিস্ট্রেশন সনদের জন্য ভিড় বেড়েছে চিকিৎসকদের।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর এক বছরের ইন্টার্ন শেষ করেছেন এমন চিকিৎসদের ভিড়ই এখানে বেশি। বিএমডিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, মাসখানেক আগেও গড়ে প্রতিদিন ১০-১৫টি রেজিস্ট্রেশন সনদ ইস্যু করা হলেও বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৮০-১০০ জন চিকিৎসক সনদ গ্রহণের জন্য আসছেন। একসঙ্গে এত চিকিৎসকের আগমনের ফলে বিএমডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমবিবিএস পাসের পর এক বছরের ইন্টার্ন কোর্স শেষ করার পর থেকে পরবর্তী তিনমাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করলে ফি এক হাজার ৫০০ টাকা। তিন মাসের মধ্যে আবেদন না করলে অতিরিক্ত এক হাজার টাকাসহ দুই হাজার ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। সাধারণত রেজিস্ট্রেশনের জন্য এক থেকে দু্ই সপ্তাহ সময় লাগে। তবে কেউ জরুরিভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন সনদ উত্তোলন করতে চাইলে তাকে অতিরিক্ত আরও তিনশ টাকা জমা দিতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। এ কারণে অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তিন মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সনদ তুলতে আসতে পারেননি। তাই এ সময়ে জরিমানার টাকাটা আদায় না করলে ভালে হতো।
তবে বিএমডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকের সনদ উত্তোলনের ব্যাপারে কেমন যেন অনীহা রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোথাও চাকরি কিংবা রোগীর চিকিৎসা প্রদানের ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকলেও তারা সনদ ছাড়াই চাকরি করেন ও রোগী দেখে থাকেন। তবে ইদানীং ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে তারা রেজিস্ট্রেশনের জন্য ভিড় করছেন। লেট ফি (বিলম্ব মাশুল) আদায় না করলে তাদের অনেকে রেজিস্ট্রেশন নিতে আসবেন না বলে তারা মন্তব্য করেন।